রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২৮ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক :
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম (একাংশ) সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ৬ দফা প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ করার স্বার্থে অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রবীণ এই আইনজীবী।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
একাদশ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এমতাবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
ড. কামালের দাবিগুলো হচ্ছে- রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেয়া, সকল দলের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা এবং নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
কামাল হোসেনের তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। পরে মঞ্চে বসা কামাল হোসেন নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই অনুষ্ঠান সফল করার জন্য আপনারা কষ্ট করে এসেছেন এজন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আজকে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশে। আমাদের যে লক্ষ্যগুলো আছে, সেগুলোকে অর্জন করতে হলে এই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমার একটাই আবেদন, আমরা সবাই মিলে জাতীয় ঐক্যের জন্য কাজ করি, ঐক্যবদ্ধ হয়েই আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।
কামাল হোসেন বলেন, গণফোরাম জনগণের মালিকানা ও জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। এদেশ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, আপনার-আমার সকলের। আসুন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোচ্চার হয়ে সকল জনসাধারণের সাংবিধানিক দাবি আদায়ের জন্য এক যোগে কাজ করি এবং অপরাজিত ও কালো টাকা দুর্নীতিকে চিরতরে উৎপাটন করি এবং একত্রে দেশ গড়ে তুলি।
ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। প্রবীণ এই আইনজীবী আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গণফোরাম গঠন করেন। ১৯৯২ সাল থেকে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন তিনি।
একাদশ নির্বাচনে ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছিল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেই সংলাপে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি অভিযোগ আনে, সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ ‘কথা রাখেনি’।
ভোটের পর ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপি জোটের দূরত্ব বাড়ে। বিএনপি সমমনা ও বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। এই আন্দোলনে ড. কামাল হোসেনের সম্পৃক্ততা নেই। তবে গণফোরামের অপর অংশের সমর্থন আছে।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। গণসংগীত দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়।
২০২১ সালে নেতৃত্বে মতপার্থক্যে আলাদা আলাদা জাতীয় কাউন্সিল করে গণফোরাম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একভাগের নেতৃত্বে ড. কামাল হোসেন, আর অন্যভাগে রয়েছেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াসিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের সভাপতি পরিষদ সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, মোকাব্বির খান, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, মোশতাক আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, শাহ মো. নুরুজ্জামান, মাহফুজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।