শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:১২ অপরাহ্ন




দিনাজপুরের ৫টি উপজেলা ৬ ডিসেম্বর পাকহানাদার মুক্ত

দিনাজপুরের ৫টি উপজেলা ৬ ডিসেম্বর পাকহানাদার মুক্ত

দিনাজপুর প্রতিনিধি :
পাক হানাদার বাহিনী আর মুক্তিকামী বাঙ্গালী ও মিত্র বাহিনীর মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধে এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। ৬ ডিসেম্বর জেলার ৫টি উপজেলা এক সাথে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে বাঙ্গালীরা। ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হওয়া উপজেলাগুলো হচ্ছে- বীরগঞ্জ, বোচাগঞ্জ, কাহারোল বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ।

বীরগঞ্জ
তিন দিক থেকে মুক্তিবাহিনী আর মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমনে পাকবাহিনীরা পূর্ব দিকে পিছু হটতে থাকে। ১৯৭১ সালের আজকের ৬ ডিসেম্বর বীরগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদান মুক্ত দিবস। এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বীরগঞ্জ এলাকাকে শক্রমুক্ত করে মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর যোদ্ধারা। হানাদার বাহিনী বীরগঞ্জ থেকে পিছু হটে বীরগঞ্জ-কাহারোল উপজেলা সীমান্তে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে ভাতগাঁও ব্রিজের পুর্ব প্রান্তে অবস্থান নেয়। ৬ ডিসেম্বর সকালে বীরগঞ্জের অলিগলির মুক্ত বাতাসে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

বোচাগঞ্জ
১৯৭১ সালের এই দিনে বোচাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে শত্রুমুক্ত করেছিল বোচাগঞ্জের মাটি। বোচাগঞ্জের মাত্র ১১৫জন দামাল ছেলে ও একজন আনসার সদস্যসহ মোট ১১৬জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণপন লড়াই চালিয়ে এই দিনে বোচাগঞ্জকে হানাদার মুক্ত করেন। সম্মুখযুদ্ধে ধনতলা গ্রামের আব্দুর বারেক ও এনামুল হক, কাকদুয়ার গ্রামের চিনিরাম দেবশর্মা, বিহাগাঁও গ্রামের কাশেম আলী, রনগাঁও ইউনিয়নের ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গুলিয়া বাংরু, বনকোট চুনিয়াপাড়া গ্রামের বীর্যমোহন রায় বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বমোট ১৩জন মানুষ শহীদ হন। বর্তমান নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর দুই ভাইকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। এখনও তারা নিখোঁজ রয়েছেন। তার রমিজা রউফ এখন তার সন্তানের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকেন।

বিরামপুর

১৯৭১ সালের এই দিন সকালে স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর দখল থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী বিরামপুর উপজেলা এলাকাকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করেন। আজকের তারিখে পাক বাহিনীরা বিরামপুর ছেড়ে সৈয়দপুর তাদের অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি সেনারা ৪ ডিসেম্বর পাইলট স্কুলের সম্মুখে ও ঘাটপাড় ব্রিজে প্রচণ্ড শেলিং করে ভাইগড় গ্রাম দিয়ে তীরমনিতে শেল নিক্ষেপ করে। লোমহর্ষক ও সম্মুখযুদ্ধে কেটরা হাটে ১৬ মুক্তিযোদ্ধাসহ ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত ও শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আহত ও পঙ্গুগুত্ব বরণ করেন।

নবাবগঞ্জ

নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর পাশাপাশি উপজেলায় হওয়ায় দুই উপজেলার মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ত্রিমুখি যুদ্ধ শুরু করায় পাক বাহিনী পিছু হাটতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে ভোরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী নবাবগঞ্জ উপজেলা এলাকাকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করেন। মুক্তি বাহিনীরদের আক্রমণের কারণে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। একপর্যায়ে উপজেলার ভাদুরিয়া নামক স্থানে পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে মিত্রবাহিনীর তুমুল লড়াই হয়। সেখান থেকে হানাদাররা মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজিত হবার আশঙ্কায় পিছু হটতে হটতে ঘোড়াঘাট এলাকায় যায় এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।

কাহারোল
পশ্চিমে বোচাগঞ্জ উপজেলা আর পূর্বে বীরগঞ্জ উপজেলায় হওয়ায় কাহারোল উপজেলায় পাক বাহিনীরা তেমন ভাবে অবস্থান করতে না পারায় ১৯৭১ সালের আজ ৬ ডিসেম্বর কাহারোল হানাদার মুক্ত দিবস। স্বাধীনতাযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর দখল থেকে আজকের দিনে ভোরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী কাহারোল উপজেলা এলাকাকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত করেন। ৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্তি বাহিনী কাহারোল বাজারে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করে।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com