শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
বিধবার একমাত্র আয়ের উৎস্য একটি দোকান দীর্ঘ এক যুগ ধরে দখল করে রেখেছে ভাড়াটিয়া। ভাড়াও দিচ্ছেনা, দোকানও ছাড়ছেনা। উল্টো মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। এতে দেনমোহর বাবদ স্বামীর দেয়া শেষ সম্বল হারিয়ে হতাশা আর উৎকণ্ঠায় দিশেহারা বৃদ্ধা। ছেলে মেয়ে নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সেইসাথে প্রাণনাশের হুমকিতে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অসহায় নারী। এমনই অমানবিক পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া মহিলা কলেজ মোড় এলাকার মৃত মুর্তজার স্ত্রী ইশরাত জাহান (৬২)। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে এমন অভিযোগ করেন তিনি। এসময় তার ২ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, শহরের মুন্সিপাড়া জাসদ মোড়ে রেলওয়ের জায়গায় আমার একটি দোকান আছে। দোকানটি ১৯৭৭ সালে পৌরসভার কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে হোটেল ব্যবসা করতো আমার স্বামী। ২০০০ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দেনমোহর বাবদ তা আমাকে লিখে দিয়ে যান।
স্বামীর মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে দুই বছর মেয়াদে দোকানটি ভাড়া দেই কয়ানিজপাড়ার মফিজ উদ্দিনের ছেলে মফিজুল হক লেবুকে। মেয়াদ শেষে নতুন করে ভাড়ার চুক্তিনামা করতে বললে টালবাহানা করে এবং ভাড়া দেয়াও বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে সে দোকানটি কিনেছে বলে নিজের দাবি করে তাই আর ভাড়া দিবেনা সাফ জানিয়ে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী শালিস মিমাংসায় বসলে লেবু ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায় এবং নতুন করে চুক্তির মাধ্যমে আবারও দোকান ভাড়া নেয়। কিন্তু তারপরও সে আগের মতই চক্রান্ত করে। এর প্রতিবাদ করলে ডাকাতির মিথ্যে মামলা দিয়ে দুই ছেলেকে হাজত খাটায়।এভাবে সে ষড়যন্ত্র করে দীর্ঘ একযুগ ধরে দোকানটি জবরদখলে রেখেছে।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর উপার্জনের একমাত্র উৎস্য ওই দোকানের ভাড়া দিয়ে ছেলে মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছিলাম। ভাড়াটিয়া লেবু অর্থ ও ক্ষমতার জোরে অবৈধভাবে দোকানটি আত্মসাৎ করার ফলে অর্থাভাবে খেয়ে না খেয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছি।
বিধবা বৃদ্ধার ছেলে মুহাম্মদ মোশতাক বলেন, ভাড়াটিয়ার প্রতারণায় একদিকে ন্যায্য ভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অন্যদিকে নানা হয়রানী এবং প্রাণনাশের হুমকিতে চরম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। প্রতিনিয়ত জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় দিশেহারা অবস্থায় অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে কাটাচ্ছি। তার উপর মিথ্যে মামলার যাতনায় পর্যুদস্ত অবস্থা।
এমতাবস্থায় গত শনিবার লেবুর সাথে তার ভাই লিমন দোকানের মালিকানা দাবি করে বিবাদে লিপ্ত হয়। এসময় কাউন্সিলরের নির্দেশে এলাকাবাসী দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তাই কোনরকম বিশৃঙ্খলা না করে কাগজপত্র দেখে এর সুরাহার জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক বিচারের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বৃদ্ধা বলেন, আমার একমাত্র সম্বলটুকু অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে আয়ের মাধ্যমে জীবনের বাকি দিনগুলো সুখে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দিতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগীতা কামনা করছি। নয়তো স্বপরিবারে পথে বসলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা বলে জানান বিধবা ইশরাত জাহান।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ভাড়াটিয়া মফিজুল হক লেবু মুঠোফোনে বলেন, মুর্তজা মালিক হলে তার দুই স্ত্রীই সমান অংশীদার। দ্বিতীয় স্ত্রী পতুল তার অংশ বিক্রি করেছেন। তাই অর্ধেক দোকানের মালিক আমি। কিন্তু প্রথম স্ত্রী ও তার ছেলেরা বেআইনিভাবে পুরো দোকানের মালিকানা দাবী করছে। ফলে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। দখল বা আত্মসাতের কোন বিষয় নাই।