শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন




মাশরুম চাষে সফলতা, বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিকল্পনা ৭ উদ্যোক্তার

মাশরুম চাষে সফলতা, বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিকল্পনা ৭ উদ্যোক্তার

ফুলবাড়ি (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
ইউটিউবে ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মাশরুম চাষ করে সফল হয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ জন উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা। ইউটিউবে ভিডিও দেখে‌ অনুপ্রাণিত হয়ে মাগুরা ড্রীম মাশরুম সেন্টার (ডিএমসি) থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নেয় তরুণ উদ্যোক্তা মাহাবুব খন্দকার নয়ন। পরে এলাকায় আরো ছয় বন্ধুকে উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিতে উদ্বুদ্ধ‌ করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে সাতজনের যৌথ উদ্যোগে ফুলকুড়ি বিএমসি নামে মাশরুম চাষের প্রোজেক্ট শুরু করেন। সফলতা অর্জন করায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

মাশরুম একটি উপকারী, স্বাস্থ্যসন্মত খাবার। এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। ওষধি গুণের কারণে ডায়াবেটিকসহ নানা রোগের পথ্য হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে মাশরুম। সেই সঙ্গে ভোক্তাদের অনেকে খাদ্য তালিকায় মাশরুম যোগ করছেন। মাশরুম দিয়ে সাবান, পাউডার, স্যুপ, চপসহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার তৈরি করা যায়। দেশে মাশরুমের বাজার বড় হচ্ছে। এ খাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহও বাড়ছে। দেশের বাইরেও মাশরুমের বেশ চাহিদা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ডস ও ভারত এই ১০টি দেশে মাশরুমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের নজির হোসেনের ছেলে মাহাবুব খন্দকার নয়ন। সে ফুলবাড়ী ডিগ্রী কলেজে স্নাতক ১ম বর্ষে পড়ে। ইউটিউবে মাশরুম চাষের একটি প্রতিবেদন দেখে মাশরুম চাষ করার আগ্রহ জাগে তার। একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ভিডিও থেকে ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ শুরু করে দেয়। পরে ডিএমসি থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নেয়ার পর স্থানীয় নাজমা বেগম, গালিব রহমান, সুমন্ত রায়, আরমান হোসেন, মুরাদ হোসেন ও হাবিবুর রহমানকে উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন।

গত ডিসেম্বরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই সাতজন মিলে ফুলকুড়ি বাণিজ্যিক মাশরুম সেন্টার (বিএমসি) নামে মাশরুম চাষের একটি প্রোজেক্ট শুরু করেন। প্রথমে তার বাড়ির পাশে (ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এর সামনে) পরিত্যক্ত জমিতে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের ঘর নির্মাণ করে। তারপর ডিএমসি থেকে মাশরুম বীজের ২৫ টি স্পন প্যাকেট কিনে এনে সিলিন্ডার করে চাষ শুরু করেন। বীজ থেকে শুরু করে মাশরুম উৎপাদন পর্যন্ত শ্রম বাদে প্রতি সিলিন্ডারে ব্যয় হয়েছে ২’শ টাকা। প্রতিটি সিলিন্ডারে ৩-৪’শ গ্রাম মাশরুম উৎপাদন হয়েছে। আশেপাশের অনেকেই আগ্রহ নিয়ে দেখতে ও মাশরুম কিনতে আসছেন। প্রতি কেজি মাশরুম ৬-৭’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রথমবারেই সফলতা পেয়ে ব্যপক পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

মাশরুমের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে উদ্যোক্তারা বলেন, ‘মাশরুম চাষের জন্য দেড় থেকে দুই ইঞ্চি খড় সিদ্ধ করে হালকাভাবে শুকাতে হয়। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। এরপর খড়গুলো পলিথিনে প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিতে হবে (প্যাকেটটিকে সবাই সিলিন্ডার নামেই চেনে)। প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে কয়েকটা ছিদ্র করে দিতে হবে। এরপর ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অন্ধকার ঘরে রেখে দিতে হবে। দিনে ৮-১০ বার স্পনগুলোতে পানি দিতে হয়। সাধারণত ২৫-৩০ দিনে মধ্যে পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাবে যাকে মাইসেলিয়াম (মাশরুমের ছাতা) বলে। এরপর মাশরুম খাওয়ার উপযোগী হয়।’

তরুণ উদ্যোক্তা মাহবুব খন্দকার নয়ন বলেন, মাত্র ২৬ টি স্পন দিয়ে মাশরুম চাষের প্রজেক্ট শুরু করেছিলাম। এবার বীজের মাস্টার মাদার নিয়ে এসে নিজেরাই ২০০ টি স্পন প্যাকেট তৈরি করেছি। উৎপাদনের কোনো ব্যাঘাত না ঘটলে অনেক লাভ হবে। মাশরুম চাষ করে আমাদের আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করলে অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করতেছি। উদ্যোক্তা গালিব রহমান ও আরমান হোসেন মাশরুম চাষে সমস্যার বিষয়ে বলেন, মাশরুম উৎপাদন করা খুব সহজ হলেও বিক্রি করতে অনেকটাই ঝামেলা। যদি বিক্রির নিশ্চয়তা থাকতো তাহলে কাজটি আরও সহজ হতো।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ফুলবাড়ীর বেকার যুবকদের জন্য ফুলকুড়ি মাশরুম সেন্টারের উদ্যোক্তাগণ অনুকরণীয়। আমাদের দপ্তর থেকে প্রজেক্ট‌টি পরিদর্শন করা হয়েছে। যেকোন পরামর্শে উপজেলা কৃষি বিভাগ তাদের পাশে থাকবে। আমরা চাই আরো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক এবং মাশরুম চাষের বিপ্লব ঘটুক।

মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৯-১০ সালে দেশে মাশরুম উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার মেট্রিক টন। ১০ বছরে দেশে মাশরুমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে চার গুণ। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের হিসাবে উদ্যোক্তা ও চাষিরা মিলে গড়ে তুলেছেন বছরে ৮০০ কোটি টাকার মাশরুম বাজার। গত ১০-১৫ বছরে দেশের

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com