শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন




হাত-মুখ দিয়ে লিখে মাস্টার্সে লালমনিরহাটের ফিরোজ

হাত-মুখ দিয়ে লিখে মাস্টার্সে লালমনিরহাটের ফিরোজ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি :
কৃষক ঘরের সন্তান ফেরদৌস আলম ফিরোজ। জন্ম থেকেই তার হাত দুটো অচল, তবুও পড়াশুনায় পিছিয়ে নেই প্রতিবন্ধী ফেরদৌস আলম ফিরোজ। হাত অচল থাকলেও তিনি মুখ দিয়ে লিখে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশুনা। যদিও ছোট বেলায় তিনি পা দিয়ে লিখতেন। মাঝে মাঝে আর্থিক কষ্টে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হলেও কৃষক বাবা তাকে থামতে দেয়নি। বর্তমানে তিনি মাস্টার্সে পড়ছেন।

বলছি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ধরলা নদীপাড়ের কাউয়ামারী গ্রামে শাহাব উদ্দিনের ছেলে প্রতিবন্ধী ফেরদৌস আলম ফিরোজ কথা । চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ফিরোজ। বাকি তিন ভাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেন। বাবা শাহাব উদ্দিন একজন কৃষক। মা ফিরোজা বেগম গৃহিনী। ৫ বিঘা আবাদি জমির উপর নির্ভর করছে সংসারে। পরিবারে দারিদ্রটা লেগেই থাকে। দারিদ্র্যতার মাঝেও প্রতিবন্ধী ফিরোজকে সংগ্রাম করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে সামনের দিকে।

তার বাবা জানান, মনের প্রবল ইচ্ছা আর সংগ্রামকে মানিয়ে নিতে পারলে সফলতায় পৌঁছতে কোন বাঁধাই কাউকে দমিয়ে রাখতে পারে না। তেমনি এক দৃষ্টান্ত ফেরদৌস আলম ফিরোজ। কৃষক ঘরের সন্তান হলেও সে আজ মুখ দিয়ে লিখে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশুনা।

তিনি আরো জানান, ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহনের পর থেকেই প্রতিদিন সংগ্রাম করে বেঁচে আছে সে। ফেরদৌস আলম ফিরোজ ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০১৫ সালে পাস করেন এইচএসসি। ২০১৯ সালে পাস করেন অনার্স। এখন পড়ছেন মাস্টার্সে। কোন জড়তা ছাড়াই হাসি খুশি থেকে পড়াশুনা করছে।

তার বাবা আরো বলেন, কৃষিকাজ করে সন্তানদের পড়াশুনা করানো তার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ফিরোজকে পড়াশুনা করাতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পা দিয়ে লিখে পড়াশুনা করেছে ফিরোজ। এরপর মুখ দিয়ে লেখার চর্চা শুরু করে। মুখে কলম আটকিয়ে অচল হাত দিয়ে কোনরকমে ব্যালেন্স করে লিখতে হয় তাকে। এতে খুব কষ্ট হয়। তারপরও পিছিয়ে নেই সে। এটাই আমাদের গর্ব সে লেখাপড়া বন্ধ করেনি।

ফিরোজের সহপাঠী মশিউর রহমান বলেন, ফিরোজ মুখ দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেক সুন্দর। মুখ দিয়ে লিখে সে অনার্স পাস করে সমাজের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়েছে। তার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। ‘আমরা কখনোই তাকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখিনা। তাকে সবসময় সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। ফিরোজের সংগ্রাম আমাদেরকে সফলতার দিকে পৌঁছতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

পাটগ্রাম আদর্শ কলেজের প্রভাষক ফজলুল হক বলেন, ফিরোজ প্রতিবন্ধী কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থী। সে সদালাপি নম্র ও ভদ্র। ‘ফিরোজকে দৃষ্টান্ত রেখে আমরা অন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। ফিরোজের সংগ্রাম আমাদেরকেও অনুপ্রেরণা যোগায় বলেও তিনি জানান।

ফিরোজের ছোট ভাই অনার্সের শিক্ষার্থী খুরশিদ ওয়াহিদ পরশ বলেন, ভাইয়া প্রতিবন্ধী হয়েও সবসময় আমাদের প্রতি খেয়াল রাখেন। আমাদের পড়াশুনার খোঁজখবর নেন। আমিও তার সংগ্রাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

ফিরোজের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ফিরোজ নিজে গোসল করতে পারে না। খেতে পারে না। কাপড় পরিধান করতে পারে না। তিনি সবকিছু করে দিচ্ছেন। ছেলে বড় হয়েছে তাই মায়ের কাছ থেকে কিছু কাজের সহযোগিতা নিতে জড়তায় ভুগছে ফিরোজ। কিন্তু নিরুপায়। সংসারে কাজের ফাঁকে ফিরোজকে সময় দিতে হয়। তার খেয়াল রাখতে হয়। ফিরোজ এখন বড় হয়েছে তাই একটু সমস্যা হচ্ছে।

প্রতিবন্ধী ফেরদৌস আলম ফিরোজ বলেন, মুখ দিয়ে লিখতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু যেদিন পরীক্ষায় পাশ করছি, সেদিন থেকে আরো সাহস পেয়েছি। স্যারেরা আমাকে প্রচুর ভালোবাসেন। কষ্টকে মানিয়ে নিয়েছি স্বানন্দে।

তিনি আরো বলেন, জন্মের পর থেকেই মা আমার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত কষ্ট করে যাচ্ছেন। মায়ের সাহায্য ছাড়া আমার পথচলা ও বেঁচে থাকা দুরূহ। তিনি স্কুল ও কলেজে সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা ও সহানুবুতি পেয়ে আসছেন। সকলে তার প্রতি আন্তরিক। তবে দারিদ্র্যতার কারণে মাঝে মাঝে আর্থিক কষ্টে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

ফিরোজ কষ্ট করে বলেন, আমার স্বপ্ন আমি একটি সরকারী চাকুরী করব। কিন্তু এ অবস্থায় আমাকে কে চাকুরী দিবে। তুবও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশী আমাকে একটি যে কোন সরকারী চাকুরী দিলে আমার এতদিনের কষ। সব ধুয়ে মুছে যাবে। তাই দাবি তিনি দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবন্ধী ফেরদৌস আলম ফিরোজ ।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com