রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১০ পূর্বাহ্ন
জাসিম সরকার,কাউনয়া(রংপুর) প্রতিনিধি :
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মোঃ মামুনুর রশিদ মামুন(৩০) কেঁচো সার (ভার্মিকম্পোস্ট) উৎপাদন করে এখন স্বাবলম্বী। ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করে ক্রমেই চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি। স্বল্প মূলধনের এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে চান মানুষের মাঝে। প্রতি মাসে এ সার বিক্রি সব খরচ মিটিয়ে তিনি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন।
সম্প্রতি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের নিজদর্পা গ্রামে মৃত আব্দুল করিমের পূত্র মামুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে একচালা টিনের ঘর। ওই ঘরেতে তিনি কেঁচো সার উৎপাদন করে থাকেন। ঘরের মেঝেতে নিজের হাতে বানানো প্রায় ২০ থেকে ২৫টি মাটির চারি (পাত্র) ও কিছু টি রিং স্লাব রয়েছে।
মামুন বলেন, ২০১০ সালে তিনি কউিনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের কাছ থেকে পরার্মশ নিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। তারপর কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে কিছু কেঁচো সংগ্রহ করে তার ধারাবাহীকতা অব্যহত রখেন।
মামুন জানান প্রথমদিকে একটু কষ্ট হলেও এখন ভালোই বিক্রি হচ্ছে। কোঁচো সার উৎপাদনে উপকরণ হিসেবে থাকছে কচুরি পাতা, পচা গোবর, খৈর, ডিমের খোসা, মাছের আইস ও শাকসবজির উচ্ছিষ্ট। আমার চারি (পাত্র) বেশ বড় আকারের। প্রতি চারিতে প্রায় ৬ মণ সার রাখা যায়। আমার এখানে সার উদপাদনের পাশাপাশি কেঁচোর বংশবিস্তার হচ্ছে। তাই বাহির থেকে আমার আর কেঁচো সংগ্রহ করতে হয় না।
তিনি জানান, প্রথমে গোবর সংগ্রহ করে ১০ দিন যাবত পচাতে হবে। গোবরে যদি পানি থাকে তাহলে রোদে শুকাতে হবে। তারপর ওই গোবর ঠান্ডা করে চারিতে (পাত্র) রাখতে হবে। তারপরে কেঁচো দিতে হবে। তারপর কচুরি পাতা, পচা গোবর, খৈল, ডিমের খোসা, মাছের আইস ও শাক-সবজির উচ্ছিষ্ট মিশিয়ে চটের বস্তাা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।
কেঁচো আবার ছায়া বা অন্ধকার জায়গা পছন্দ করে। এভাবে ১ মাসের মধ্যে তৈরি হয় ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার। আমার এখানে এখন ১০ লাখ টাকার কেঁচো সার রয়েছে। প্রতি কেজি সার ১০ টাকা করে বিক্রি করি। ১ কেজি কেঁচো ২ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এ ছাড়াও কেঁচো ২ টাকা পিচ হিসেবে বিক্রি করি। আমার সংসার ভালোই চলতেছে। ভবিষ্যতে আমার খামারে আরো বেশি পরিমাণ কোঁচো সার উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
কিভাবে কেঁচো সার করি তা দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে আমার এ খামার মানুষ আসতেছে। এটা আমার কাছে ভালোই লাগে। আমি চাই এলাকার বেকার ছেলেরা এগিয়ে আসুক। এ সার উৎপাদন করে আমার মত তারা স্বাবলম্বী হোক। সহজেই কম পুঁজিতে ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হতে পারে। এখন বাজারে রাসায়নিক সারের মান খুবই খারাপ। আবার দামও বেশি। সেখানে ভার্মিকম্পোষ্ট পুরোপুরি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি একটি সার। এ সারের দামও কম। তাই স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মোঃ সাইফূল ইসলাম জানান, আমাদের এলাকার মামুন ঘরে বসে সার বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছে। এটা আমাদের কাছে প্রশংসার মামুনকে সবাই কেচো মামুন হিসেবেই বেশি চেনে। আমরা চাই সে আরও বড় উদ্যোক্তা হোক।
কৃষক মোঃ আসাদুজ্জামান জানান , আমার একটি সবজি বাগান রয়েছে। আমি শুনতে পাই কেঁচো দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে সার তৈরি করছেন। আমি সেখান থেকে সার নিয়ে এসে সবজি বাগানে দেই। এবার সবজি বাগানে ফলন ভালোই এসেছে। এই সারটি প্রকৃতিক একটা সার কোনো ভেজাল নেই দামও কম।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন বলেন, জৈব পদার্থ হলো মাটির প্রাণ। ক্রমেই মাটির প্রাণ হ্রাস পাচ্ছে তাই আমরা জৈব সার প্রয়োগের উপরে জোর দিচ্ছি। কেঁচো সারে ফলন ভালো হয় এটা প্রমাণিত। তাই আমরা চাষিদের সবজি খেতে ও ফলের বাগানে ভার্মিকম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে বলি।
স্বল্প পরিসরে হলেও এখানে ভার্মিকম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হচ্ছে। ভার্মিকম্পোস্টকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তা তৈরির প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের। পাশাপাশি এ উপজেলাকে ভার্মিকম্পেস্ট সম্পন্ন উপজেলা হিসেবে পরিণত করা। এ সারের যতই ব্যাবহার বাড়বে ততই ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসবে বলে জানান তিনি।