শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন




শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি

শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি

বগুড়া প্রতিনিধি :
বগুড়ার শেরপুরে ১০০ বিঘা জমিতে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে প্রায় এক মাস আগে ধানের চারা রোপণ করা হয়। সেই চারাগুলোতে এখন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে।
শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামে দুই জাতের ধানের মধ্যে এখন ‘পাখির চোখে’ (উপর থেকে তোলা ছবিতে) বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ এক রূপকল্প ফুটে উঠেছে। মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ২৯ জানুয়ারি চারা রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সদস্য সচিব কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিকৃতিটি তৈরি করা হয়।

আয়োজকরা জানান, প্রতিকৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে গিনেজ বুকে স্থান দেয়ার জন্য গত বছরের মার্চ মাস থেকে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু কর্মসূচির কাজ শুরু করা হয়। সোনালি এবং বেগুনি রঙের ধানগাছে ফুটিয়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। চায়না থেকে বেগুনি রঙের ধানের জাত (এফ-১) আমদানি করা হয়েছে।

প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান জানান, এর মধ্যেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে রেকর্ড গড়ার জন্য গিনেজ ওয়াল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করা হয়েছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ এর ভিডিও ও প্রয়োজনীয় দলিল গিনেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আশা করা যাচ্ছে ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিনে নতুন এই বিশ্ব রেকর্ড অর্জন উদযাপন করা হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আজীবন লড়াই করেছেন মানুষের ভাত-কাপড়ের অধিকার ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে। তাই দুই রঙের ধান গাছই বেছে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকার জন্যে। বেগুনি রঙের ধান ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে জাতির পিতার বিশাল প্রতিকৃতি। ফিল্ড ট্রায়াল সম্পূর্ণ করা জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ কর্মসূচির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ১০০ বিএনসিসি ক্যাডেটকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ কাজের জন্য তৈরি করা হয়।

গিনেজ ওয়াল্ড রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র ২০১৯ সালে চীনের তৈরি করা। যার আয়তন ছিল ৭৫ বিঘা। ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার কৃর্তপক্ষের দাবি, বগুড়ায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটে উঠবে। এটিই একক ব্যক্তি হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি।

এই প্রকল্পে তিন বিঘা জমি ইজারা দিয়েছেন একই গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিদিন অনেক মানুষ দেখতে আসছে। বাস নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ঘুরতে এসে ব্যাপক খুশি। আগে বুঝতে পারিনি ধানের মধ্যে দিয়ে মানুষের ছবি দেখা যাবে। তাও আবার বঙ্গবন্ধুর ছবি। আমি ব্যাপক খুশি জমিতে এমন চাষ দেখে। সাধারণভাবে এই ছবি দেখা যাচ্ছে না। তবে পাখির মতো উপর থেকে দেখা যাচ্ছে ক্যামেরার মাধ্যমে।

আয়োজকরা জানান, ১-১৬ ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক ছিল। তাদের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

তারা আরো জানান, এর আগে ১৩ রেজিমেন্টের বিএনসিসির ১০০ জন করে সদস্য প্রতিকৃতি তৈরি করা করেছে। একদল শুকনো জমিতে প্রতিকৃতি নির্মাণ করেছে। আরেকদল কাঁদা জমিতে লে-আউট তৈরি করেছে। তাদের মধ্যে বগুড়ার আজিজুল হক সরকারি কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, সরকারি শাহ সুলতানসহ আরো অনেক শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে।

পরে নকশার দায়িত্ব পায় এক্সপ্রেশন লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। এই ১০০ বিঘা জমি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ৯ হাজার টাকায় সাত মাসের (নভেম্বর থেকে মে) জন্য ইজারা নেয়া হয়। এই ফসল উঠে গেলে কৃষকরা আবার তাদের জমি ফেরত দেয়া হবে।

প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ একটা ইউনিক প্রজেক্ট। জাতীয় কমিটির মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য হলো শস্যচিত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা। এর পাশাপাশি এই শস্যচিত্রটি গিনেস বুকে অন্তর্ভুক্তি করার প্রচেষ্টা। গিনেস কর্তৃপক্ষের সবগুলো শর্ত মেনেই এই প্রকল্প করা হচ্ছে।

কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান বলেন, এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে শস্যচিত্রটি পরিপূর্ণ হবে। তখন ড্রোন দিয়ে ছবি তুললে শস্যচিত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি পুরোপুরি দেখা যাবে। শস্যচিত্র পূর্ণ হলে তথ্য-উপাত্ত গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com