বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৬:১৫ অপরাহ্ন




সৈয়দপুরে ভাই ও ভাতিজার হামলায় আহত সাবেক সেনা সদস্য’র মৃত্যু

সৈয়দপুরে ভাই ও ভাতিজার হামলায় আহত সাবেক সেনা সদস্য’র মৃত্যু

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন ভাই, ভাতিজা ও ভাগিনার হাতে প্রাণ গেছে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যের। ঘটনাটি ঘটেছে ২৩ ফেব্র“য়ারী মঙ্গলবার ভোর রাতে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর কদমতলী বাড়াইশালপাড়ায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। ঘাতকরা স্বপরিবারে পলাতক। নিহতের নাম মোঃ ইদ্রিস আলী প্রামানিক (৬২)। তিনি সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন।

জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত. আশরাফ উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে ইদ্রিস আলী পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত জমির সাথেই বাড়ি করার জন্য ৫ বছর আগে ইউনুস কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে ৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। উক্ত জমিতে বাড়ি করতে গেলে তারই বড় ভাই খায়রুল ইসলাম লাল্টু দাবি করেন যে তিনি ওই জমি আগেই কিনেছেন মৃত. কছিম উদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে। এবং তা খায়রুল ইসলামের নামেই রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। একারণে তিনি বাড়ি করতে বাধা দেন এবং জমির দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে উভয় পক্ষের মধ্যে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে খায়রুল ও তার ছেলে মাসুদ রানা ও মাছুম এবং ভাগিনা আবুল কালাম আজাদ অতর্কিতভাবে হামলা করে ইদ্রিস আলীর উপর। এসময় খায়রুল ইসলাম তার হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র বাইস দিয়ে সজোরে আঘাত করলে ইদ্রিস আলীর বাম চোখ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে সবাই মিলে এলোপাথারী ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করে তার পুরো শরীর থেতলে দেয়। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ইদ্রিস আলীকে উদ্ধার করে তার পরিবারের লোকজন। প্রথমে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

সেখানে চিকিৎসক জানান, রোগীর অবস্থা ভালো না। চোখে আঘাত পাওয়ার কারণে তার মস্তিস্কের সবগুলো রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এজন্য ব্লাড সার্কুলেশন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় ব্রেণ ড্যামেজ হয়ে গেছে। একারণে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় সেখানে দীর্ঘ ১৮ দিন চিকিৎসার পর বাড়িতে নিয়ে আসা হয় এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে গিয়ে চেকআপ করানো হলেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। এরই মাঝে গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি মারা যান। পূর্বের সেই হামলার ঘটনায় নীলফামারী জেলা জজ আদালতে ৪ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। এতে আসামীরা হলেন খায়রুল প্রামানিক, তার ছেলে মাসুদ ও মাছুম এবং ভাগিনা আবুল কালাম আজাদ। এতে আসামীরা হলেন খায়রুল প্রামানিক, তার ছেলে মাসুদ ও মাছুম এবং ভাগিনা আবুল কালাম আজাদ।

নিহত ইদ্রিস আলীর ছোট ছেলে মোঃ সোহেল রানা বলেন, আমার বাবা অত্যন্ত শান্ত ও ভদ্র মানুষ। তার অন্য ভাইয়েরা বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলেও তিনি কোন দিন তাদের কাজে যেমন বাধা দেননি তেমনি নিজেও সেধরণে কোন কাজে জড়িত হননি। কিন্তু তারাই আবার আমার বাবার সরলতার সুযোগ নিয়ে অন্যদের সাথে যেমন অন্যায় অবিচার করেন তেমনি আচরণ শুরু করেন।

এই জমি নিয়ে বিরোধে তারা তাদের ভুমিদস্যুতার রুপ নিয়ে বার বারই আমাদের উপর আঘাত করার চেষ্টা করেছেন। তারা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাদের জমি জবর দখল করতে চায়। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণেই তারা আমার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা করে গুরুত্বরভাবে আহত করে। তাদের আঘাতের কারণেই আমার বাবা সেই দিন থেকে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আজ মৃত্যুর মুখে পতিত হলেন। আমরা এর বিচার চাই।

বড় ছেলে শাহিন বলেন, আমরা নিরিহ হওয়ায় খায়রুল ও আব্দুলরা আমাদেরকে ধমক দিয়ে দাবিয়ে রাখতে প্রায় সময়ই অন্যায়ভাবে নানা চাপ দিয়ে আসছেন। বাবাকেও উপুর্যুপরি আঘাত করে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন আবার আমাদেরকে ওই ঘটনায় করা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতার মাধ্যে আছি। বাবা হত্যার বিচার পাবো কিনা তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি। কারণ আজ বাবার লাশ পোষ্ট মর্টেম করার জন্য মর্গে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা বাধা দিয়েছে। পরবর্তিতে তারা সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেও পারে।

খায়রুলের পরিবারের সদস্যরা সবাই পলাতক থাকায় তাদের ০১৭৭০৩৯০২০৪ মোবাইল নম্বরে কল দেয়া হলে তাও বন্ধ পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় তাদের বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে ইদ্রিস আলীর অন্য ভাই আব্দুল প্রামানিক তেড়ে এসে বলেন, সাংবাদিকরা কেন এখানে এসেছেন। এখানে কি মার্ডার হয়েছে যে তাদের আসতে হবে। এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। আমরাই এর সমাধান করবো। সাংবাদিকের প্রয়োজন নেই। আমার ভাই ক্যান্সার আক্রন্ত হয়ে মারা গেছেন। এক ভাইকে হারিয়েছি, অন্যদের কোন ক্ষতি হতে দিবোনা।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল হাসনাত খান বলেন, লাশ উদ্ধার করা নয়। মূলতঃ অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের পরিবারের দাবি ইতোপূর্বে মারামারির ঘটনায় তিনি চোখে ও শরীরে আঘাত পাওয়ার কারণে অসুস্থাবস্থায় মারা গেছেন। তাই লাশ ময়না তদন্ত করা হয়েছে। যাতে আঘাতের কারণেই মৃত্যু হয়েছে না বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com