মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন
পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
(২৯- নভেম্বর) পঞ্চগড় মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে । রবিবার (২৯- নভেম্বর ) সকালে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড.সাবিনা ইয়াসমিন জেলা প্রশাসক পঞ্চগড় ।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আনোয়ার সাদাত সম্রাট । জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আলীম খান ওয়ারেশী। সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আমিরুল ইসলাম । সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরিফ হোসেন । সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ. টি. এম সারোয়ার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সায়খুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্বাস আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জাকির হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মজিদ বাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল আউয়াল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসমাইল হোসেন । অনুষ্ঠানে বক্তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের নানা ঘটনা ও মুক্তি যোদ্ধাদের অবদান সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন ।পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের নানা ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা বলেন অনেকেই ।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, মোঃ আজাদ জাহান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঞ্চগড় ।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের আজকের দিনে শত্রুমুক্ত হয় পঞ্চগড়। দেশের দামাল ছেলেরা পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে উত্তর প্রান্তের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে উড়িয়ে দেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ইতিহাসের বৃহত্তম গণহত্যা শুরুর পর অন্য এলাকার মতো পঞ্চগড়েও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মিলিত হয়ে গড়ে তোলেন মুক্তিবাহিনী।
১৭ এপ্রিল সকালে পাকবাহিনী পঞ্চগড় দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে যায়। এরপর পাক সেনারা জেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়াসহ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পঞ্চগড় দখল করে পাকবাহিনী জেলা সদরের তালমা, গলেহা, মির্জাপুর, আটোয়ারী সদর, বোদা, ময়দানদীঘি, নয়াদিঘী, সাকোয়া, জগদল, অমরখানাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নেয় তেঁতুলিয়ার ভজনপুর, মাগুরমারীসহ বিভিন্ন এলাকায়। তারা ভজনপুর এলাকার করতোয়া ও চাওয়াই নদীর ব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে ভেঙে দেয়।
এ কারণে আক্রমনকারী পাকহানাদার বাহিনী শেষ স্থান হিসেবে অবস্থান নেয় অমরখানায়। এদিকে করতোয়া ও চাওয়াই নদীর ব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে ভেঙে দেওয়ায় পাকসেনারা জেলার শেষ পর্যন্ত তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে প্রবেশ করতে পারেনি। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের সকল কর্মকাণ্ডের তীর্থ ভূমিতে পরিণত হয় এই তেঁতুলিয়া। পরবর্তীতে তেঁতুলিয়া থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের চাউলহাটি, কোটগছ, থুকরাবাড়ি এবং বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ার ভজনপুর, মাগুরমারী, ময়নাগুড়ি, দেবনগর, ব্রাম্মণপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে পঞ্চগড় ছিল ৬ (ক) সেক্টরের আওতাধীন। এ অঞ্চলে মোট ৭টি কোম্পানির অধীনে ৪০টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট যুদ্ধ করে। সেক্টর কমান্ডার মেজর আবুল বাশার, তরিকুল আলমসহ অন্যদের নেতৃত্বে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতে থাকে। এদিকে নভেম্বরের শুরুর দিকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ হয় ভারতীয় মিত্রবাহিনী।
যৌথ আক্রমণের তীব্রতায় পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক বাহিনী। মুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন এলাকা। পর্যায়ক্রমে ২০ নভেম্বর অমরখানা, ২৫ নভেম্বর জগদলহাট, ২৬ নভেম্বর শিংপাড়া, ২৭ নভেম্বর তালমা, ২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সিও অফিস এবং একই দিনে আটোয়ারী ও মির্জাপুর মুক্ত করে। এরপর আরও কিছু এলাকা শত্রুমুক্ত করা হয়। অবশেষে ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় এলাকা শত্রুমুক্ত হয়।