বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি :
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের পরচুলা কারখানা এভারগ্রিণ প্রোডাক্ট ফ্যাক্টরি বিডি লিমিটেডে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শনিবার (২৮ জুন) সকালে অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুর করে দূর্বৃত্তরা। রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে নীলফামারী সদর থানায় মালিক পক্ষ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
জানা যায়, ওই মামলায় পাঁচজন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ৩৫০ জনকে আসামী করে মামলাটি করা হয়। কারখানার প্রধান নির্বাহী ও চেয়ারম্যান ফিলিক্স ওয়াই সি চ্যাঙ ওই ঘটনাটিকে শ্রমিক অসন্তোষের আড়ালে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে উল্লেখ করেন। ওই ঘটনায় কারখানার ১৫ কোটি টাকার ক্ষতির কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ওইদিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের আন্দোলনকে পূূঁজি করে কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সিসি ক্যামেরা ও কম্পিউটার ধ্বংস করে নিয়ে যায়। যারা এ কাজটি করেছেন তারা কেউ আমার কারখানার শ্রমিক না। কারণ তারা ওই ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময় হামলা করেছেন শুধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর। হামলার শিকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা সকল শ্রমিকদের চেনেন ও জানেন। এ কাজে যারা জড়িত ছিল তারা সকলেই অপরিচিত।
চ্যাঙ বলেন, ‘আমি আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাছে গিয়ে ২০-২৫ মিনিট কথা বলেছি। আমার কথায় তারা শান্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আমার ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে শ্রমিকরা আমাকে রক্ষা করে। এ সময় আমি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ছোরা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হই।
তিনি বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ গোটা পৃথিবীতে হয়ে থাকে। কিন্ত সেটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কর্মসূচি পালন করতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। আমার কারখানায় যে ভাঙচুর করা হয়েছে তা সন্ত্রাসী কায়দায়। শ্রমিক অসন্তোষের আড়ালে দেড় থেকে দুইশত জন মুখোশধারী হেলমেড পরা ব্যক্তি তিন ঘন্টা ধরে ওই হামলা চালায়। তারা পরিকল্পিতভাবে হাতে রেঞ্জ, স্ক্রু ড্রাইভার, হাতুড়ি, লোহার রড ও ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ ঘটনায় আমিসহ এখানকার অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন হতাশ।
তিনি বলেন, তারা প্রথমে নিরাপত্তা কক্ষ তছনছ করার পর সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর ও উল্টে দিয়ে কারখানা ও অফিস ফ্লোরে ভাঙচুর চালায়। এসময় সিসি ক্যামেরাসহ কম্পিউটারের হার্ড ডিক্সগুলো খুলে নেয়।
এতে লুট হয়েছে নগদ ৯০ লাখ টাকা। আগুনে পুড়ে গেছে দুটি কাভার্টভ্যান, ১০টি মোটরসাইকেল ও ৫০ টি বাইসাইকেলসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। এ ছাড়াও ৫ টি ফর্ক লিস্টার, ৪৫০ সিসি ক্যামেরা, ৩২০ টি কম্পিউটার ৩২০ টি হার্ডডিক্স সহ অসংখ্য আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উৎপাদিত পণ্যসহ কাঁচামাল। এতে ক্ষতির পরিমান ১৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ২০ বছর ধরে আছি। এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। এই কারখানায় ১৭ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এখানে যারা এসেছিল তারা দেশের উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করতে এসেছিলেন। দেশ এবং মানুষের উন্নয়নে আমরা পাশে আছি। এখন জরুরী প্রয়োজন আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যথায় বিকল্প ভাবতে হবে আমাদেরকে।
সমস্যার কথা তুলে ধরে চ্যাঙ বলেন, কারখানার ম্যানেজম্যান্ট এবং শ্রমিকদের একটু সমস্যা ছিলো, সেটি উত্তোরণের চেষ্টা করছিলাম। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এভারগ্রিনের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক কল হ্ল্যা হ্যান মঙ, উপ মহা-ব্যবস্থাপক কাজী ফেরদৌস উল আলম ও হারুন উর রশিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কারখানার উৎপাদিত পণ্য রপ্তানী বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটের পরও শ্রমিকদের বেতন, ভাতা, মাতৃকালিন ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের বোনাস বাবদ (উৎসব ভাতা) লকারে রক্ষিত ৯০ লাখ টাকা দূর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে যায়।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকালে মামলার ব্যাপারে সদর থানার ওসি (তদন্ত) মাহমুদ উন নবী জানান, (তদন্তের সার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার রাতে চারজনকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নীলফামারী সদর থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইপিজেডের গত শনিবারের ওই ঘটনায় এভারগ্রিণ কারখানা কর্তৃপক্ষ পাঁচজন নামীয়সহ আজ্ঞাত ৩৫০ জনের নামে মামলা করেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এটি দেখা হচ্ছে। এঘটনায় এখনো কেউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। আসামীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে