শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন




ভালবেসে বিয়ে করেছি লিমাকে অতপর:

ভালবেসে বিয়ে করেছি লিমাকে অতপর:

নিউজ ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার হাটাব টেকপাড়া এলাকায় ৬ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন ইফাদ ও আফসানা করিম লিমা। কিন্তু বিয়ের এতোদিন পর লিমা তার স্বামীকে ডিভোর্স দেবে বলে জানায়। শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রীকে আনতে গেলে লিমার বাবা রেজাউল করিম লোটন মেয়ের জামাই ইফাদকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
এ অপমান সহ্য করতে না পেরে অভিমানে ইফাদ (৩০) আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবারের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফাদের জানাজার নামাজ শেষে নিহতের বাবা-মা এ অভিযোগ করেন।

এর আগে বুধবার সকাল ১১টার দিকে ইফাদ কীটনাশক খায়। বিষয়টি টের পেয়ে তার পরিবারের লোকজন প্রথমে ভুলতা জেনারেল হাসপাতাল ও পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়ার পর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফাদের বাড়িতে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-পরিজন সবাই দুঃক্ষ প্রকাশ ও দোয়া করেন। স্থানীয় শত শত মানুষের ফেসবুক ওয়ালে ঘুরছে ইফাদের মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ।

নিহত ইফাদের বাবা জহিরুল হক জানান, তিনি উপজেলার কাঞ্চন পৌর সভার ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার এক ছেলে ও ১ মেয়ে। ভাইবোনের মধ্যে ইফাদ ছোট। সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাশ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। প্রায় ৬ বছর আগে তার ছেলে ইফাদ ও প্রতিবেশী রেজাউল করিম লোটনের মেয়ে আফসানা করিম লিমা ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করে। লিমা তখন এইচএসসি-তে পড়ে।

এইচএসসি পাশের পর ইফাদের ইচ্ছাতে লিমাকে ঢাকার বারিধারায় পায়োনিয়া ডেন্টাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তার পাশেই একটি বাসা বাড়িতে থাকতো সে। স্ত্রীর যাবতীয় খরচ বহন করতো ইফাদ। ছেলের বউকে ডেন্টালে পড়াতে গিয়ে জমি বিক্রি করে ও ইফাদের মায়ের স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করেন জহিরুল হক। আশা একটাই, তার ছেলে পরিবার নিয়ে সুখী হবে।

কিন্তু স্ত্রীর উচ্চশিক্ষাই তার জীবণে কাল হলো! এবার ডেন্টালে ফাইনাল পরিক্ষা দিচ্ছিলো লিমা। করোনাকালীন সময়ে ভার্সিটি বন্ধ থাকায় বাপের বাড়ি চলে আসে সে। পরে ইফাদের মায়ের কথায় গত রমজানের আগের দিন লিমা তাদের বাড়িতে আসে। আবার ৬ রোজার দিন বিকালে বাপের বাড়ি চলে যায় লিমা। যাওয়ার সময় বলে যায় ২-৩ দিনের মধ্যেই ফিরে আসবে। কিন্তু সেই-যে গেলো আর ফিরে এলো না।

এদিকে লিমার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে স্বামী ইফাদ ও শ্বাশুড়ি শেফালী বেগম। কিন্তু লিমা আর ফিরে আসে না। তাকে বারবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করে না। পরে ইফাদ তার স্ত্রীকে আনতে শ্বশুড়বাড়ি যায়। তবুও সে তার স্ত্রীর দেখা পায় না। সে কয়েকদিন তার শ্বশুরবাড়ি গেলেও স্ত্রীর সাথে আর তার দেখা হয় না।

এভাবেই কেটে যায় ১ মাস। সবশেষ ২৪ জুন সকালে ইফাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে জানায়, লিমা তাকে ডিভোর্স দিতে চায়। কিন্তু তখনও তারা লিমার সাথে দেখা করতে দেয়নি। এ সময় ইফাদ তার স্ত্রীর সাথে দেখা করার কথা বললে শ্বশুর লোটন উত্তেজিত হয়ে তাকে গাঁড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আর বাকি জীবণে যেনো এই বাড়িতে না আসে সে কথা বলে তাকে শারীরীক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগও করেন ইফাদের বাবা।

ইফাদের বাবা জানান, এ অপমান সহ্য করতে না পেরে কীটনাশক খেয়ে দুনিয়ার মায়া ছেড়ে যেত চায় সে। মৃত্যুর আগে ‘লিমা তুমি মিথ্যাবাদী’ বলে চিৎকার করে কান্না করেছিলো ইফাদ। শুধু তাই নয়, আমার ছেলের অকালমৃত্যুতে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আনন্দ-উল্লাস করেছে। ইফাদের মৃত্যুতে হাজার হাজার মানুষের চোখে জল আসলেও মানুষরূপী এই হায়নাদের কারোই মন গলেনি। এমনকি ইফাদের দাফনেও আসেনি তারা।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলেকে যারা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমার মৃত্যুর আগে যেনো তাদের বিচার দেখে যেতে পারি।

লিমার চাচা আজাদুর রহমানের কাছে ইফাদের আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com