রবিবার, ১১ Jun ২০২৩, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন




চলতি মাসেই বাজারে আসবে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম

চলতি মাসেই বাজারে আসবে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম

স্টাফ রিপোর্টার :
রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম দেশের অন্যতম সেরা আমের খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে সুস্বাদু এ আম। এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ২০ ভাগ আম ঝরে গেছে। তার পরেও এবার ২০০ কোটি টাকার হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করার আশা করছেন এ অঞ্চলের আমচাষিরা। জুন মাসের ২০ তারিখের পর থেকে এ আম বাজারে আসবে। পদাগঞ্জ হাট এখন দেশে অতি পরিচিত। কারণ, এখানে আমের মৌসুমে হাঁড়িভাঙা আমসহ বিভিন্ন ধরনের আমের পাইকারি বাজার বসে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে এখান থেকে আম কিনে নিয়ে যায়। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সরেজমিন বদরগঞ্জ উপজেলার পদাগঞ্জ এলাকায় সারি সারি আমের বাগান দেখা গেছে। প্রতিটি বাড়িতে ১০ থেকে ১৫টি, কোনও বাড়িতে তার চেয়ে বেশি হাড়িভাঙ্গা আমের গাছ রয়েছে। ওই এলাকার কৃষক মমতাজ উদ্দিন, আয়েন উদ্দিন, মোসলেমা বেগমসহ অনেকেই জানালেন আট-দশ বছর আগেও এসব এলাকার মানুষের ছিল চরম অভাব। তিন বেলা তো দূরের কথা, এক বেলাও খাবার জুটতো না। এলাকাটির মাটি লাল হওয়ায় এখানে বছরে একবার ধান উৎপাদন হতো। বাকি আট মাস পতিত পড়ে থাকতো জমি। কিন্তু হাঁড়িভাঙা আম তাদের ভাগ্যের চাকা বদলে দিয়েছে। এখন ওই জমিতে আমের বাগান গড়ে তুলেছেন তারা। আম বিক্রি করে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। যাদের জমি নেই সেইসব পরিবারগুলো বাস্তভিটাতেই হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছ লাগিয়ে ভালোভাবেই জীবন যাপন করছেন। বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর, পদাগঞ্জ কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট সর্দারপাড়া, সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি, পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান গড়ে উঠেছে। মূলত লাল মাটিতে এ আমের চাষ ভালো হয়। গত বছর আমের দাম ভালো পাওয়ায় আরও নতুন নতুন আম বাগান গড়ে তুলেছেন এ এলাকার সাধারণ মানুষ। এবার হাঁড়িভাঙা আমের ফলনও হয়েছে বাম্পার। বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলার ৭০টি গ্রামের মানুষ এই আম চাষ করে তারা এখন স্বাবলম্বী। তবে ক্ষুদ্র চাষিদের অভিযোগ, তারা আমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে তারা আরও বেশি লাভবান হতেন। বড় ব্যবসায়ীরা আগাম টাকা দিয়ে আমের বাগান কিনে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন বেশি। তারা আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। পদাগঞ্জের রানীপুকুর এলাকার হোসনে আরা নামে এক নারী জানান, পাঁচ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। পাঁচ সন্তান নিয়ে আনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটতো তার। স্বামীর রেখে যাওয়া চার বিঘা জমিতে আমের বাগান করে প্রতি বছর আম বিক্রি করেই তিন-চার লাখ টাকা আয় হয় তাদের। এখন তিনি সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাচ্ছেন। এ বছর এই আম সুষ্ঠুভাবে বাজারজাত হলে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের যাতে ব্যবসায়ীরা যাতে হাঁড়িভাঙা আম কিনে নিয়ে যেতে পারেন সেজন্য ব্যাপক প্রস্তুুতি জেলা প্রশাসনের। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সরোয়ারুল আলম জানান, এ বছর রংপুরে এক হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম হয়েছে। আম্পানের সামান্য ক্ষতি হলেও প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষে কোনও ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। আঁশমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় এ আমের চাহিদা এখন সারা দেশে। রংপুরের জেলা প্রশাসক আহসান হাবীব বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা আম যাতে নিরাপদে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা নিয়ে যেতে পারেন সে জন্য গাড়িতে বিশেষ স্টিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও পথে যাতে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যাতে মানুষ আম নিয়ে যেতে পারে সেজন্য নগরীর কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা খোলারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com