শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:০০ অপরাহ্ন




করোনার কারনে ঘরেই নববর্ষ পালন

করোনার কারনে ঘরেই নববর্ষ পালন

রেজাউল করিম জীবন :
করোনা ভাইরাসের মহামারির মাঝে এসেছে বাঙলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ। প্রায় মাসব্যাপী সাধারণ ছুটিতে ঘরে থাকা সারাদেশের মানুষ। ফলে অনেকটা নিরবেই নববর্ষ বরণ উৎসব।
সম্ভবত স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হচ্ছে না। তবে সারাদেশের মতো রংপুরেও আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত না হয়ে পারিবারিক আবহে ঘরে বসেই মানুষ নববর্ষকে স্বাগত জানাচ্ছে।
সকালে উত্তর জনপদের সাহিত্য-সংস্কৃতির মাঠ টাউনহলে গিয়ে দেখা যায়, ফাকা পরে আছে মাঠ, কোথাও কোন মানুষের দেখা নাই, গাছের পাতায় ভরে আছে সাহিত্যমঞ্চ। ফুলের দোকানগুলো বন্ধ। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে বড় বড় তালা ঝুলছে।

১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষ ১৪২৭- মঙ্গলবার প্রথম দিন। অন্যবারের মতো এবার আর সকালে ওঠার যেমন তাড়া নেই, তেমনি কোন পোশাক পরবে কিংবা শাড়ির সাথে বøাউজ ম্যাচিং কিংবা পাঞ্জাবী বা ফতুয়ার সাথে কিসের ম্যাচিং করে পরবে সেটি নিয়ে তেমন আলোচনা কিংবা চিন্তাও নেই। নগরীর কোথাও যানজট কিংবা নববর্ষের ছিটে ফোটাও নেই। সাহিত্য কর্মী ও সাংবাদিক হিসেবে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোন ব্যস্ততা নেই। অথচ স্বাভাবিক দিনে পহেলা বৈশাখে সেই সকাল থেকে রাত অবদি দৌড়ছুটের অন্ত নেই।
এ অবস্থায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে মৌচাক প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট লেখক রেজাউল করিম মুকুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না হোক বের হওয়া। আমরা সবাই মিলে বাসায়ই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবো। আগামী দিনগুলো কেমন হবে জানি না। ফলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাসায় যতটুকু পারা যায় বৈশাখের আয়োজন করা।
তরুন কবি খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, প্রতিবার পহেলা বৈশাখে সবাইকে নিয়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঘুরে বেড়াতাম, কিন্তু এবার করোনার কারণে বাইরে যাওয়া হচ্ছে না। সারাদিন টিভিতে বৈশাখী অনুষ্ঠান দেখে পার করবো। বেঁচে থাকলে আবারও পুরোনা রূপে বৈশাখ উদযাপন করবো। একই কথা তরুণ ছড়াকার ফজলে রাব্বী, শ্যামলী বিনতে আমজাদসহ অনেকেই জানান।

কবি ও গল্পকার সাহিনা সুলতানা বলেন, সামনের দিনগুলি বাংলাদেশের জন্য খুবই সতর্ক থাকার। তাই বৈশাখ এবার মনে নেই। গল্পকার মনিরা পারভীন পপি জানান, বাসায় বন্দি থেকে যতটুকু পারা যায় বৈশাখের আয়োজন করা। মন ভালো নেই, করোনার প্রকোপ দেশে দিনে দিনে বাড়ছে। ভয় আর সঙ্কা সবসময় কাজ করছে।

রাজনৈতিক সংগঠক ও মৌচাক উপদেষ্টা আলেয়া খাতুন লাভলী বলেন, আগামী দিনগুলো যেন ভাল কাটে সে জন্য মন খারাপ না করে অনুপ্রেরণা নিয়েই এ দিনটি শুরু করা যেতে পারে।
এদিকে নববর্ষের দিন ঘরবন্দি অনেক অসহায় পরিবারে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন অনেকেই। তাদেরই একজন সমাজসেবী রবিউল ইসলাম রবি। তিনি বলেন, পাশের ঘরে না খেয়ে থাকা পরিবারটির খাবার ব্যবস্থা করে দেওয়াই হোক নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়। তিনি ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিদিন খাবার বিতরণ করছেন নিজ উদ্যোগে।
বাঙলা নববর্ষ পালিত হচ্ছে সীমিত পরিসরে বাসায়।
কন্ঠশিল্পী ও গীতিকার ফারহান শাহিল লিয়ন জানান, বাঙলা নববর্ষ এলে আমার এতই ব্যস্ত থাকি যে সকাল দুপুর রাতে ভাত খাওয়ার সমটুকু পাই না। অথচ এবার বাসায় অলস সময় পার করছি। এবার আর গানের কিংবা অনুরোধ নেই, অনুষ্ঠানের অনুরোধ নেই, নেই একাডেমীর শিক্ষার্থীদের ফোন। সবমিলিয়ে করোনার মহামারি পহেলা বৈশাখের আয়োজন ¤øান করে দিয়েছে।
লাখো মানুষের প্রাণ নেয়া করোনা ভাইরাস দিনে দিনে আরো বেশি শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশে চুড়ান্ত আঘাত করার অপেক্ষায়। পহেলা বৈশাখের দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার তাই প্রমাণ করে। সেই ভয় নিয়ে এবারে বাংলাদেশের মানুষ ঘরেই পালন করছে পহেলা বৈশাখ। সবার প্রত্যাশা বাঙলা নববর্ষ হয়ে উঠুক নতুন সূর্যোদয়ের বাহক, কোলাহলে ভরে উঠুক বিশ্ব। প্রাণ ফিরে পাক বিশ্বের মানুষ।
লেখক : সম্পাদক : সাহিত্যের কাগজ মৌচাক

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com