শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন




কিশোরগঞ্জে শিশু শ্রমিক দিয়ে চলছে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ

কিশোরগঞ্জে শিশু শ্রমিক দিয়ে চলছে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ

মাফি মহিউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)প্রতিনিধি :
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসুচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে স্কুল পড়ু–য়া শিশু শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও প্রকল্পে অসহায় হতদরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের নাম থাকার কথা থাকলে স্থানীয় ইউপি সদস্যর ছেলে, সদস্যর ভাই,ভাতিজা,গ্রাম পুলিশ, চেয়ারম্যানদের নিকট আত্নীয়, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা ও কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যদের নাম দেয়া হয়েছে।
তারা কাজ না করলেও হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাযার্লয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি)১ম পযার্য় ৯ টি ইউনিয়নে ৮১ টি প্রকল্পে ১৮১৬ জন শ্রমিকের বিপরীতে এক কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার্র নির্দেশে প্রতিটি ইউনিয়নের প্রকল্পের কমিটি গঠনের মাধ্যমে গত ০২/১১/২০১৯ থেকে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে।
গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চাঁদখানা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এলজিইডির পাকা সড়কের উভয় পার্শের মাটি ভরাট প্রকল্পের ২৯ জন উপকারভোগীর (শ্রমিক) বিপরীতে দুই লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। মোট কর্মদিবস ৪০ দিন। কিন্তু প্রকল্পে বাস্তবে দেখা যায়, সড়কের উভয় পার্শের ২৯ জন শ্রমিকের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১৪ জন শ্রমিক। ওই ১৪ জন শ্রমিকের মধ্যে মোকছেদুল ইসলাম নামে চাঁদখানা মাঝাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্ঠম শ্রেণির এক ছাত্র কাজ করছেন।
মোকছেদুল ইসলাম নামে ওই শিশু শ্রমিকের সাথে কথা বললে সে জানায়, আমরা তিন ভাই, আমার বাবা একজন দিনমজুর , আমার মা গৃহিনী , আমার মায়ের খুব অসুখ চিকিৎসা করার মত কোন সামর্থ নেই। কাজে না আসলে মায়ের হাজিরা বন্ধ করা হবে। তাই আমার মায়ের চিকিৎসা করার জন্য মায়ের বদলী হিসাবে কাজে এসেছি।

এসময় হাজিরা খাতা যাচাই করে দেখা যায়, যে ১৫ জন শ্রমিক কাজে অনুপস্থিত রয়েছে তার মধ্যে চাঁদখানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দুই সহযোগী এন্দা মিয়া, রবিউল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ লাট সাহেব এবং ইউপি সদস্যর ভাই ভাতিজাসহ আপন জনের নাম রয়েছে।
প্রকল্প এলাকার জাহিদ হাসান, আজিজুল ইসলাম এবং লিয়াকত মিয়া বলেন, চাঁদখানা ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের ৯ টি প্রকল্পে কমপক্ষে থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন প্রভাবশালীদের নাম রয়েছে। তারা দিনের পর দিন কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করছে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছিটরাজিব কারিপাড়া সড়কে মাটি ভরাট প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ২২ জন শ্রমিকের নাম থাকলে কাজ করছেন মাত্র ১৪ জন শ্রমিক। এর মধ্যে রাকিবুল ইসলাম নামে দুন্দিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্র রোল নম্বর ১৪ মাথায় মাটির ডালি নিয়ে অনেক কষ্ট করে প্রকল্পের কাজ করছেন। এসময় শিশু রাকিবুলের সাথে কথা বললে সে জানায়, মা অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজ করতে পারেনা তাই মায়ের বদলী হিসাবে কাজ করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন(সুবিধাভোগী) শ্রমিক জানান, প্রভাবশালীরা তালিকায় অন্তরভুক্ত আছে ঠিকই কিন্তু তারা তদারকি কর্মকতার্র সাথে যোগসাজস করে দিনের পর দিন কাজে না এসে টাকা উত্তোলন করে আত্নসাৎ করে।
চাঁদখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন, শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করার কোন নিয়ম নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার্ আব্দুল হাই সরকার বলেন, যারা কাজে আসেনা তাদেরকে অনুপস্থিত দেখানো হবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার আবুল কালাম আজাদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কেউ যদি শিশুদের দিয়ে প্রকল্পের কাজ করিয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com