শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:০৯ অপরাহ্ন




গাছ কমলেও দিনাজপুরে খেজুরের রস সংগ্রহে চলছে প্রস্তুতি

গাছ কমলেও দিনাজপুরে খেজুরের রস সংগ্রহে চলছে প্রস্তুতি

ইদ্রিস আলী, দিনাজপুর :
দিনাজপুর খেজুরের রস। প্রবাদ বাক্যটি আজও রয়েছে চিরাচরিত। দিনে কিছুটা গরম হলেও সন্ধ্যা হলেই শীতের আগমন বার্তা নিয়ে আসে। সকালের শিশির ভেজা পথ, যা শীতের আগমনের বার্তা আরও জোরালো হচ্ছে। এরই মধ্যে দিনাজপুরের গাছিরা আগাম খেজুর গাছ ছোলতে শুরু করেছে। যারা খেজুর গাছ থেকে বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করতে পারদর্শী তাদের ‘গাছি’ বলা হয়। শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুন হাতে গাছ চাঁছাছোলা করছে। কয়েকদিন পরই গাছিদের খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যাবে।
শীতের মৌসুম আসলে দিনাজপুরে খেজুরগাছ কাটার উৎসব শুরু হয়। খেজুরের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। তাদের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। শীতে মৌসুম মানেই খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো দিনাজপুর। দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় চলছে মাঠে মাঠে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে গুড় তৈরিতে গাছিরা বেশি লাভবান হবে বলে ধারণা করছেন তারা।




জেলার ঘুঘুডাঙ্গা এলাকার গাছি মোঃ মকবুল, আনারুল এবং রবিউল জানান, আমরা বহু বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে আসছি। আগের তুলনায় মাঠে খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কম। তাই খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছি সীমিত সংখ্যক গাছিরা। আগের মতো এখন আর এ কাজে ভালো লাভ হয় না। আগে এলাকার সব মাঠে ও গ্রামের আনাছে-কানাছে প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ ছিল। বর্তমানে ইটভাঁটায় খেজুর গাছ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে প্রতি বছর খেজুর গাছ নিধন হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় খেজুর গাছ লাগানো হচ্ছে না। দিনাজপুরের খেজুর গুড়ের চাহিদা ছিল দেশ জুড়ে। দিনাজপুর ঐতিহ্য ছিল খেজুরের রস গুড়। খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ রস সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না গাছিদের। এক সময়ের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তের পথে। বর্তমানে গুড় তৈরি করতে অধিক খরচ হওয়ায় লাভের ভাগ খুব কমই দেখা যায়। সেই জন্য অনেক গাছি এ কাজ ছেড়ে দিয়েছে। আবার অনেকেই কাজের ফাঁকে এ কাজ করে থাকে। তাই কোনো রকমে তাদের পুষিয়ে যায়। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। খেজুর গাছ থেকে গড় উৎপাদন একটা বাড়তি আয়ের উৎস ছিল। তাই গাছিরা অন্যান্য কাজের সঙ্গে তাদের খেজুর গুড় তৈরির কাজ ধরে রেখেছে।




রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির বিষয় জানতে চাইলে, দিনাজপুরের গ্রামের গৃহবধূরা বলেন, শীতের সকালে খেজুর রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে বোঝানো যাবে না। সকাল হলেই খেজুর রস, পিঠা ও গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠে গ্রাম। শীতের খেজুর রসের পিঠা-পায়েশ খুবই মজাদার। শীতের সকালে গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস দিয়ে ক্ষীর, পায়েশসহ হরেক রকমের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে। শীতের সকালে গ্রামের বাড়ির উঠানে মিষ্টি রোদে বসে খেজুরের গরম গরম গুড় দিয়ে রুটি খাওয়ার মজাই আলাদা। খেজুর গুড়ের পাটালি দিয়ে নতুন ধানের মুড়ি খুবই মুখরোচক। খেজুরের নলের গুড় ছাড়া শীতকালীন পিঠা উৎসবের কথা ভাবাই যায় না।
পরিবেশ বিদদের মতে শুধুমাত্র খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্ট রস-গুড় এবং নানা প্রকার সুস্বাদু খাবার পেতে নয়, পরিবেশ বাঁচাতে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে আমাদের উচিত নির্বিচারে খেজুর গাছ না কাটা। বেশি বেশি করে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য সবাইকে উৎসাহিত করাই হবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com