শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন




উলিপুরে অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে পন্ডিত বাতেনের জীবন

উলিপুরে অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে পন্ডিত বাতেনের জীবন

ফয়জার রহমান রানু,উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে পন্ডিত বাতেনের জীবন। তদানিন্তন ব্রিটিশ ও ব্রিটিশোত্তর পশ্চিম পাকিস্থান’র শোষক গোষ্টির অবহেলা, নিপীরন-নির্যাতন ও শিক্ষায় জাতি যখন কোন্ঠিত ছিলো, ভারত বর্ষের অন্যান্য শোষন স্থান গুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নও ছিলো একটি উলে­খ্য যোগ্য স্থান। এখানকার মানুষের ধন-মাল, টাকা-পয়সা ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বসবাস বেশী ছিলো বলে, পরাশক্তির উপধ্রæপো এখানে বেশী ছিলো।
অন্ধকার সেই যুগে মানুষ শোভ্যতার আলো থেকে দূরে ছিল। তাদের জীবন-যাত্রা ছিলো সাদা মাটা। ধর্ম শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষার জন্য তখনও কোন শিক্ষা গুরু পৌছেনি এ স্থানটিতে। শিক্ষা গ্রহনের মাঝেও সাহেবদের কঠোর নিশেধাজ্ঞার কারণে পাঠ দানের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছিলোনা। তাই, ওই সময় অশিক্ষিত জাতির মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেন মহল­ায় বা বাড়িতে। মুক্তব শিক্ষা বা ধর্ম শিক্ষার পাশাপাশি সচেতন পরিবারের ছেলে মেয়েদের জেনারেল (বাংলা-ইংরেজি) শিক্ষা বিস্তারে অত্রালাকার একমাত্র প্রখ্যাত পন্ডিত ছিলেন, ‘পন্ডিত আব্দুর রশিদ’ (ওরফে আপিল উদ্দিন পন্ডিত)। ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও তাঁর অনন্য অবদান জাতি আজ ভোগ করছেন। তিঁনি উত্তর দলদলিয়ার নিভৃত পল­ী খাঁ পাড়া (বর্তমানে মাষ্টার পাড়া) নামক স্থানে জীবন-যাপন করতেন। তাঁর যাপিত জীবনে একটি মাত্র পুত্র সন্তান যার নাম “পন্ডিত আব্দুল বাতেন।
জনাব পন্ডিত আব্দুল বাতেন পিতৃ শিক্ষায় সু-শিক্ষিত হয়ে পিতার বৃদ্ধাবসরে যুবক বয়স থেকেই (৬০’র দশক) পন্ডিতি হাল ধরেন। বর্তমানে তিনি নিঃশ্ব ও নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন। একদিকে দারিদ্রতার কোষাঘাত, অন্যদিকে নিঃসঙ্গ জীবন তাঁকে জির্ণ কুঠিরে পিলে পিলে নিস্তেজ করে দিচ্ছে।
তিঁনি পত্রিক ভিটেতেই ১৯৩৮সালে জন্ম গ্রহন করেন। বর্তমান বয়সে তিনি ৮১ পেরিয়ে গেছেন। বিষয়-আসয়ে বাবার রেখে যাওয়া দু’শতকে কুড়ো বাড়ীটি ছাড়া তাঁর অন্য কোন সহায়-সম্পদ না থাকায়, পন্ডিতি কাজে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোন রকমে সংসার চালিয়ে নিতেন। জনাব পন্ডিতের দাম্পত্য জীবনে দুই ন্ত্রী এসেছিলো। দূর্ভাগ্যক্রমে দুই স্ত্রীই পরলোক গমন করেছেন। প্রথম স্ত্রী লাইলী বেগমের সাথে ১৯৫৫ সালে বৌবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দীর্ঘ ৪৫ বছর দাম্পত্য জীবন কেটে ২ পুত্র ও ২ কন্যার জন্ম দিয়ে ২০০০ সালে পরলোক গমন করার পর ২০০৩ সালে ২য় স্ত্রী সামছুন্নাহার বেগম তাঁর জীবনে আসেন। দূর্ভাগ্যক্রমে সেও ১টি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে ২০০৮ সালে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্ত্রীদের রেখে যাওয়া ২ পুত্র ও ৩ কন্যার বিয়ে সারেন তিনি। পুত্ররা বৌ-বাচ্ছা নিয়ে অন্যত্র জীবন যাপন করায় শুধু বাড়ীতে একাকিত্ব দিন কাটাছেন তিনি। এ অবস্থায় বৃদ্ধ বয়সে উপার্জনাক্ষম হওয়ায় মহাকষ্টে পর নির্ভরশীল হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছেন। এ ব্যাপারে পন্ডিত আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমার এই দূরদিনে নিজ ইউনিয়ন দলদলিয়ার ০৬ নং ওয়ার্ডের বিগত ইউপি সদস্য চাঁদ মিয়া একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন এবং বর্তমান মেম্বার আনোয়ার হোসেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড প্রদান করলে তাদিয়ে কোন মতে দিন কাটাচ্ছি। তবে , নিঃসঙ্গতাই আমার শারীরিক ও মানষিক বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।’ এলাকাবাসীর অনেকেই জানান, এই মহুর্তে পন্ডিত সাহেবের পাশে তাঁর স্বজনদের থাকা উচিৎ।

নিউজটি শেয়ার করুন







© All rights reserved © uttorersomoy.com
Design BY BinduIT.Com